দাঁতের ব্যথার ঔষধ বা ট্যাবলেট এর নাম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য মতে বিশ্বের প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনোভাবে দাঁতের ব্যথা ভুগছে। যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। আর এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে আক্রান্ত স্থান থেকে ক্যান্সারের জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। তাই দাঁতের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। আজকের এই আর্টিকেলে দাঁতের ব্যথার ঔষধ এবং ঘরোয়া চিকিৎসার নিয়মাবলি সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

দাঁতের ব্যথার ঔষধ সম্পর্কে জানার পূর্বে দাঁতের ব্যথার কারণ সমূহ সম্পর্কে অবগত হতে হবে। দাঁতে ব্যথার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।

দাঁতে ব্যথার কারণ সমূহ

দাঁতের গর্ত বা Cavity: যা দাঁতের ওপর ক্ষয়জনিত গর্তে ব্যাকটেরিয়া জমে ব্যথা তৈরি করে।

দাঁতের স্নায়ু প্রদাহ বা Pulpits: যা দাঁতের ভেতরের অংশের প্রদাহ। এটি সৃষ্টি হলে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে।

Gingivitis বা Periodontist: এটি একটি মাড়ির রোগ যা দাঁতের চারপাশের মাড়িতে সংক্রামিত হলে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।

Wisdom Tooth: যাকে বলা হয় জ্ঞান দাঁত বা আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়ে থাকে আক্কেল দাঁত। অনেক সময় এই দাঁত উঠতে গিয়ে মাড়ি ফোলায় এবং ব্যথা অনুভূতি হয়।

Tooth sensitivity: যা দাঁতের শিরা সংবেদনশীলতা কে বুঝায়। হঠাৎ ঠান্ডা বা গরম খাবার খাওয়ার সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

ইনফেকশন বা ফোড়া: এতে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমে গেলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

এই সব সমস্যা সমাধান দাঁতের ব্যথার ঔষধ কতটুকু কার্যকরী ভুমিকা পালন করে এবং ঘরোয়া উপায় দাঁতে ব্যথা কতটুকু কমিয়ে আনা সম্ভব।

দাঁতের ব্যথার ঔষধ ও তার প্রতিকার 

দাঁতের ব্যথা কমাতে অবশ্যই চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্য কিছু ঔষধ ও ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা হলো কার্যকর দাঁতের ব্যথার ঔষধ সমূহ।

ব্যথানাশক ওষুধ বা Painkillers

প্যারাসিটামল ( Paracetamol) : সাধারণত এই ঔষধ হালকা থেকে মাঝারি ব্যথায় ব্যবহৃত হয়। তবে বড়দের জন্য ৫০০ মি.গ্রা. প্রতি ৬ ঘণ্টা পরপর সেবন কিরা যেতে পারে। (ডাক্তারের পরামর্শে)

আইবুপ্রোফেন(Ibuprofen): যা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে খুব কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এটি ২০০-৪০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত হয়ে থেকে। যা ৬-৮ ঘন্টা পর পর সেবন করতে হয়। তবে এটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি। 

ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen): এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি সাধারণত দিনে ২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের সাবধানে খাওয়া উত্তম।

দাঁতের ব্যথা কমাতে অবশ্যই চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্য কিছু ঔষধ ও ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা হলো কার্যকর দাঁতের ব্যথার ঔষধ সমূহ।

অতিরিক্ত ব্যথা বা ইনফেকশন কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক 

ব্যথা যদি সংক্রমণজনিত হয় যেমন ফোড়া বা পুঁজ ইত্যাদি। তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হয়।

অ্যামোক্সিসিলিন ( Amoxicillin): এই অ্যান্টিবায়োটিকটি ব্যাকটেরিয়া দূর করে ব্যথা হ্রাস করে থাকে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি সময়ের জন্য কিছুটা সস্তি অনুভব করে। এটি সাধারণত দিনে ৩ বার ৫ থেকে ৭ দিন সেবেন করতে হয়।

ক্লাভুলানিক অ্যাসিডসহ অ্যামোক্সিসিলিন (Augmentin): যা দাঁতের ব্যথার ঔষধ এর মধ্যে জটিল সংক্রমণে বেশি কার্যকর। তবে এতে সেবনকারীর পেটের সমস্যা হতে পারে।

মেট্রোনিডাজল (Metronidazole): এটি Anaerobic ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। যা দাঁতের ফোঁড়ায় অনেক সময় ব্যবহৃত হয়।

নোট: যেকোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

দাঁতের ব্যথার ঔষধ এর ক্ষেত্রে মলম ও জেলের প্রভাব

ওরাল জেল (Oral Gel): এটি সাময়িক ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে মুখে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ব্যবহারের পূর্বে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি।

ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশ: যা মুখের জীবাণু নাশ করে, মাড়ি ও দাঁত পরিষ্কার রাখে। এটি দিয়ে দিনে ২ বার গারগল করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে ফলে দাঁতে দাগ পড়তে পারে।

দাঁতের ব্যথার ঔষধ ঘরোয়া পদ্ধতি 

লবণ পানি দিয়ে গারগর: উষ্ণ পানিতে লবণ মিশিয়ে দিনে ৩ বার গারগল করলে ব্যথা কমে। এবং যা জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

রসুন: রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন। যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আপঅনি চাইলে রসুন থেঁতো করে ব্যথার স্থানে প্রয়োগ করতে পারেন। এতে করে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

লবঙ্গ (Clove): লবঙ্গ দাঁতের ব্যথার ঔষধ হিসেবে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এতে রয়েছে ইউজেনল। য ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। আপনি চাইলে গোটা লবঙ্গ বা লবঙ্গ তেল ব্যথার স্থানে লাগিয়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

বরফ ব্যবহার: মুখের বাইরে ফোলাভাব কমাতে বরফ সেঁক দিলে উপকার হয়।যা ফোলা কমাতে অনেকটা কার্যকরী। 

দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

  1. দিনে দুই বার ব্রাশ করা।
  2. চিনি জাতীয় খাবার কম খাওয়া। 
  3. নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করা। 
  4. ফ্লস ব্যবহার করে নিয়মিত দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার রাখা।
  5. মাড়িতে সমস্যা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া।
  6. গরম- ঠান্ডা খাবারে সাবধানতা অবলম্বন করা

শেষ কথা:

দাঁতের ব্যথার ঔষধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার বা নিজের মন মতো ঔষধ সেবন না করে, একজন যোগ্য দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।বিশেষ করে যদি ব্যথা তীব্র হয়, ফোলা থাকে বা জ্বর আসে। সেই অবস্থা অবশ্যই চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হবেন।

আরো পড়ুন: চিয়া সিড এর দাম কত ও এর উপকারিতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top